ভালোবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১৯)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৮ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৮:৩৯ রাত
“ প্রচন্ড অবসন্নতা ছেয়ে চলছে আত্ম সমগ্রে। শুষ্ক চোখ জোড়া স্থির হয়ে আছে যেন। রক্ত স্রোতে ভেসে চলছে দেহ। তবু কেন আত্মতৃপ্তির স্পর্শ পাচ্ছি। ফিস ফিস করে কারা যেন কথা বলছে, অতি পরিচিত কণ্ঠস্বরে। শত্রুর মত দানবটি হানা দিয়েছিল এ হৃদয়ের মাংসস্তূপে। ধরাশায়ী হলো আমার অজেয় আত্মশক্তি। কতক্ষণ পড়ে রইলাম দানবটিকে হৃদয়ের অন্তঃস্থলে নিয়ে জানিনা। চারিদিকে অসহনীয় সুগন্ধ। কারা যেন পুলিশের কাছে খবরটা পৌঁছে দিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনতে পেলাম মনে হয়। দেহসমগ্রে টানা হেচড়ার অনুভবের মধ্যেই তলিয়ে পড়লাম নিদ্রার অতলে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি মনে পড়ে না। চেতনা আর লুপ্তাবেশ ত্যাগ করছিল, চোখের একটি কোণ যখন উন্মুক্ত করলাম ঠিক তখনি যন্ত্রণার ডামাডোলের মাঝে আবছা দেখতে পেলাম অশরীরি মানব-মানবীদ্বয়কে। ওরা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কল্প লোকে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছি বলে মনে হলো। মনে হলো যেন জ্ঞানঘরে বসে আছি। অসংখ্য বইয়ের মাঝে হারিয়ে বারে বারে খুঁজছি প্রিয় সেই মুখটিকে। সে আজ জ্ঞানঘরে আসেনি। বিক্ষুদ্ধতায় ওখান থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনি দৃষ্টিপটে ভেসে উঠল তার প্রতিচ্ছবি। কাজলমাখা ছোট দুটি চোখে মানবীয়তা ছিল, ছিল মায়া, মোহ। যার দর্শণে প্রশান্ত এক অনুভব জাগে দেহ মনে। সে অনুভবের তৃষ্ণা অত প্রবল ছিল যে, অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। বাস্তবতায় কল্পলোকে হারিয়ে যেতাম ওর কোমল হাত ধরে। আবারো যন্ত্রণাবোধ গ্রাস করছে আমাকে, হৃদয়ের মাংসপিণ্ডে দানবটা চেপে বসে আছে মনে হলো। অসহনীয় যন্ত্রণাকে ভুলে বারে বারে চেষ্টা করছি কল্পলোকে হারিয়ে যেতে। প্রিয় মানবীকে নিয়ে রঙিন সময়গুলির মাঝে একদিন পড়ল অশনির ছায়া। বাস্তবতার নির্মম আচরণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল শিশুসুলভ হৃদয়টি। হতাশার চাদরে জড়িয়ে একটু একটু করে ডুবে যেতে লাগলাম অন্ধকারের অতলে।
শেষ দিবসে ওর হাতে হাত রেখে কেঁদে বলেছিলাম আমি ফিরে আসবো। কিন্তু পারলাম না, অন্ধকারের অশুভ শক্তি আমাকে উপহার দিল দানবীয় বুলেট। ধীরে ধীরে কল্পনাকে গ্রাস করতে লাগলো অন্ধকার, রঙিন আলোকসমগ্র বিবর্ণ হতে লাগল। অতি মানবীয় জগতের ক্ষুদ্র এক আলোক রশ্মি উন্মোচিত করছে আমার আত্মসমগ্রকে, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তা। একটু একটু করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মুক্তির অনন্তলোকে...”
লিখাটিতে অনেকক্ষণ বুদ হয়ে ছিল রায়হান। উলফাত আরা ঝংকারি নামের এই লেখিকার লেখা একটি বই সেদিন সাভারের ফুটপাথ থেকে কিনেছিল। বই কেনাটা রায়হানের অন্যতম এক নেশা। বিশেষ করে পুরনো বই। পথের ধারে পলিথিন বিছিয়ে অনেকে বিভিন্ন ধরনের বই বিক্রী করে। সাধারণ পাবলিকের ভিতরে অতি-সাধারণ মানুষের মত বইগুলোকে ওলট-পালট করে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, ঘ্রাণ শুঁকে বই কিনবার ভিতরে এক অন্য ধরণের থ্রীল পায় রায়হান। এরপর সেই বই একটু একটু করে রসিয়ে রসিয়ে পড়ে... বুকমার্ক করে রাখে।
আজও এই অখ্যাত লেখিকার বইটি এ পর্যন্ত পড়েই বন্ধ করল।
মাচার উপরে বসে নিচের দিকে তাকায় রায়হান।
ছোট্ট একটি ডোবার মতো বানিয়েছে। সেখানে পুরো পলিথিন বিছিয়ে তার উপর মাটির একটি স্তর করেছে। মটর থেকে পাইপের দ্বারা পানি দিয়ে সেই ডোবাটি পুর্ণ করেছে। সেখানে তেলাপিয়া মাছ চাষ করছে। পলিথিন থাকাতে নিচের পানি সব একেবারে মাটি শুষে নিতে পারছে না। আর প্রতিদিন পাইপ দিয়ে যেটুকে শেষ হয়, সেটুকু ভরে দেয়। এই ডোবাটির উপরে একটি মাঝারি আকারের ছনের ঘর বানিয়েছে। ডোবার উপর থেকে এক মানুষ সমান উচু করে বাশের মাচা সেই ঘরের মেঝে। এর উপরে বাশের তৈরী সুক্ষ্ণ বুননের চাঁচের মেঝে। সেখান দিয়ে নিচের পানিতে সন্তরণরত তেলাপিয়া মাছের অবাধ বিচরণ দেখল কিছুক্ষণ রায়হান।
এই ঘরটিতে মাশরুমের চাষ শুরু করেছে আজ দু’মাস হল। এই ঘরের আদ্রতা ঠিক রাখার জন্য নিচের এই ডোবা তৈরী করেছে।
সাভারের মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্রে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ‘ব্যবসা’য় নেমে পড়েছে। নিজের চিন্তা-ভাবনায় নয়। মুরাদ মামার পরামর্শে।
পরামর্শ? কিংবা নির্দেশও বলা যায়।
সারি সারি বাশের মাচা একটির উপরে একটি জি.আই তার দিয়ে বেঁধে মাশরুমের স্পুনগুলোকে রেখেছে। বেশ সুন্দর লাগছে। সবগুলো থেকে মাশরুম বের হয়েছে। একটু আগে স্প্রে দিয়ে পানি দিয়েছে। ভিজা স্পুনগুলো থেকে সাদা ফুলের মত মাশরুম- অদ্ভুত লাগছে। সেদিকে তাকিয়ে বেশ কিছুদিন আগে ফিরে যায় রায়হান...
বেকার জীবনে রায়হান যেমন অতিষ্ট হয়ে পরেছিল, রুমার মামাও বিব্রত বোধ করছিলেন। এই ছেলেটিকে নিয়ে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষে একদিন ফোনে রায়হানের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললেন। দু’দিন পরে ওর জন্য ৪৫ হাজার টাকা পাঠালালেন। সাভারের সোবহানবাগে মাশরুম ট্রেনিং সেন্টার থেকে ওকে মাশরুম চাষের উপরে ট্রেনিং নিয়ে ভিতরের খালি যায়গায় মাশরুমের চাষ করতে বললেন। আগে নিজে ট্রেনিং নিয়ে পরে এলাকার অন্যদেরকে ট্রেইনিং দিয়ে ও কিছু টাকা আয় করতে পারবে। সেই সাথে নিজের মাশরুম ফার্ম ও বাড়তে থাকবে।
স্বাধীন এই ব্যবসাটি রায়হানের মনে ধরল।
সে নতুন উদ্যমে ট্রেনিং শুরু করে দিলো। এক সপ্তাহের ট্রেনিং। ওর খুব ভালো লাগছে। দিনে ট্রেনিং করে। বিকেলে ও রাতে বাসায় রুমাকে নিয়ে কল্পনার অনেক জাল বোনে। সেখানে বিশাল এক মাশরুম খামার ধরা দেয়। সে মনে মনে বলে, 'আর চাকুরি দরকার নেই। চাকুরি মানুষে করে?'।
এই ট্রেনিং সেন্টারে হিন্দু একজন ছিলেন (সঙ্গত কারনে তার নাম বলা যাবে না) মাশরুম সেন্টারের সহকারী পরিচালক পদে। তিনি রায়হানদের ট্রেইনিং দিতেন। ওদেরকে বলা হল, ওনার নিজের 'Spoon' (মাশরুমের বীজ) এর বিজনেস আছে। ওরা ওনার থেকে বীজ কিনলে তিনি ওদের চাষ করা মাশরুম এই সেন্টারে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিবেন। কারণ মাশরুম এর বাজারজাতকরণ ই একটা সমস্যা ছিলো। এই ঘটনা যে সময়ের তখনো পাবলিক এই মাশরুমকে ব্যাঙের ছাতা জাতীয় খাবার মনে করত।
যাহোক, ট্রেনিং শেষ হলো। ঐ স্যারের সাভার ব্যাঙ্ক কলোনির বাসা থেকে ৮ টাকা দরে ৫০০ স্পুন কিনে রায়হান বাসায় নিয়ে এলো। এর ভিতরে মামার দেয়া টাকা দিয়ে একটা ছনের ঘর (বাশের স্ট্রাকচার দিয়ে বানানো, ছাদ ছনের) বানিয়েছে। ১৫ হাজার টাকা ঘরের পিছনে শেষ হয়ে গেলো। একটা ঘর বড়। ওটার নীচে ছোট ডোবার মত করে পানি দিয়ে ভর্তি করে সেখানে তেলাপিয়া মাছ ছেড়ে দিলো। এটার ফলে ঘরের নীচে পানি থাকাতে মাশরুমের জন্য আবহাওয়া ( Humidity) নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
দিনরাত কঠিন পরিশ্রম করলো। যারা এই চাষের সাথে জড়িত তার জানে যে এই মাশরুম এর ফলনের জন্য খুব সতর্ক থাকতে হয়। একটা ছোট বাচ্চা পালার মত আর কি। রায়হানকে রাতেও দেখতে হতো মাশরুম বের হয়ে বড় হল কিনা। এরপরে সেগুলো ছিড়ে পলিথিনে প্যাক করতে হত।
যাইহোক, সে প্রথম ফলন নিয়ে হাজির হলো সেন্টারে। ও একাই গেল। তখন ঐ স্যার ও ছিলেন। কিন্তু রায়হানের এতো কষ্টের উৎপাদিত ফসল নিয়ে যাবার পরে তিনি কিনলেন না। ওকে যেনো চিনতেই পারলেন না। রায়হান রাগে দুঃখে ক্ষোভে ওর সাড়ে তিন কেজির প্যাকেট সাভার বাস স্ট্যান্ডে ফেলে দিল। বেকার অবস্থায় রায়হানের অনেকগুলো টাকা নস্ট হলো এই ব্যবসার পিছনে।
পরে কি আর করা। আর একজনের বুদ্ধিতে সব কাচা মাশরুম কারেন্টের বাল্বের মাধ্যমে শুকিয়ে রাখলো। প্রায় ১২ কেজি মাশরুম শুকালে ১ কেজি হয়। রায়হান প্রায় ২৫ কেজি শুকনা মাশরুম বানিয়ে রেখেছিলো যা পরে অনেক অল্প দামে সাভারে এক দালালের নিকট বিক্রি করে।
কিন্তু সেই সহকারী পরিচালক যিনি তার ওয়াদা থেকে সরে এলেন, তাকে রায়হান কোনোদিন ভুলবোনা। তার মত পজিশনে বসে একজন মানুষ কিভাবে কথা দিয়ে উলটে যায়? রায়হানের জীবনের এক কঠিন সময় সে পার করছিল তখন। সে টাকাগুলো এমন এক ব্যবসায় খাটালো যেখান থেকে প্রায় কিছুই এলো না।
সে একজনকে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন তিনি।তাতে ওর কোনো দোষ ছিল না।
রায়হান ভাবে, এই পৃথিবী থেকে বিশ্বাস ই যদি ঊঠে যায়, তবে আমরা কি নিয়ে থাকবো। এই ঘটনার জন্যও ওকে মুরাদ মামার কাছ থেকে অনেক কিছু শুনতে হয়েছিল যা ওর মত রগচটা লোকের সহ্য করে নিতে হয়েছে।
সেই রাবণ এখন ও সোবহানবাগের 'মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্পে' আছে। তার আরো উন্নতি হয়েছে। এই রকম ই হয়। এখন তো আর রাম রাজত্ব নয়। এই যুগে রাবণরা ই ভালো থাকে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের গল্পের বইটি নিয়ে বাঁশের সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। চকিতে একটা ভাবনা সবসময়ের মতই খেলে গেলো ওর মনে। সে যে কাজেই হাত দিয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে... এখনো হচ্ছে। নিজের বাবাকে বড় হয়ে দেখাতে যাওয়াটা কি তবে ভুল ছিল? কেউ কি বাবার থেকে বড় হতে পারে? জেদ করে? পিতার সন্তুষ্টি একটা বিশাল ব্যাপার। আজকালকার ছেলেমেয়েরা কি সেটা বোঝে?
অনেক পরে এই বুঝটা রায়হানের হৃদয়ঙ্গম হল। কিন্তু বড্ড দেরী হয়ে গেলো না?
এখন সে না পারছে কিছু করে দেখাতে, না পারছে বাবার কাছে ফিরে যেতে? না পারছে মুরাদ মামাকে ফিরে গিয়ে নিজের শেকড়ের সাথে এক হবার কথাটাও বলতে?
আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলা শেষের মুহুর্তটা অবলোকন করে।
নিজের মানুষদের কাছে ফিরে যাওয়াটা এতো কঠিন কেন?
ফিরে যাওয়ারও কি কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে তবে?
রুমা মিতুকে নিয়ে বাসার ভিতরে বসে আছে। মিতু ছবি আকছে। একটা ঘুড়ির ছবি। রুমা দেখিয়ে দিচ্ছে। জানালার পাশে বসে আছে। এই জানালাটা দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত সব দেখা যায়। পায়ে চলা পথ যেটি ক্যাম্পাসের দিকে চলে গেছে সেটা... উন্মুক্ত আকাশে নীলের সাগরে সাদা মেঘেদের সন্তরণ... আর পাখিদের নিরবচ্ছিন্ন উড়ে যাওয়া – এসবই সে দেখে। ওর সময়ের অনেকটা ইদানিং এই জানালায় বসে কেটে যায়। রায়হান তার মাশরুম ব্যবসা নিয়ে মেতে আছে। আজকাল ওকে সময়ও তেমন দিতে পারছে না। মাশরুমের ঘরেই বেশীরভাগ সময় কাটায় সে। রুমার ওখানে যাওয়া নিষেধ। মেয়েদের নাকি ওখানে গেলে কি সমস্যা হবে, এতা বলার পরে সে আর যায় না।
তবে তাতেও তো শেষ রক্ষা হলনা।
এই ব্যবসাটায়ও রায়হান লস করেছে।
মামা খুব রাগ। ইদানিং তেমন ফোনও করেন না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে কেমন এক ঘোরের ভিতরে চলে যায় রুমা। ওর কাছে নিজেকে এক মেঘবালিকা মনে হয়। রায়হান এক মেঘবালক।
একই আকাশে বালক বালিকাদের সহাবস্থান। একে অন্যের কাছাকাছি... হৃদয়ের উত্তাপে ভালোবাসার ফল্গুধারা বয়ে গিয়ে তারার জন্ম হয়। বালিকার নীল হৃদয় বালকের লাল হৃদয়ের ছোয়ায় একাকার! দুটি অভিন্ন হৃদয় এক হতে শুরু করে। চেনা অচেনার দুই ভিন্ন জগত নীলাকাশের নীচে স্বপ্নের নীড় খোঁজায় ব্যাকুল। বালক বালিকার হাতে হাত রেখে অনাগত ভবিষ্যতের বীজ বোনে। পরম নির্ভরতায় বালিকাও বালকের ছায়ায় মুখ লুকোয়। বালকের হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে উঠে-
' সজনী সাঝের তারা হয়ে
কেন আমার আকাশে এলে
পাশে চাঁদ
তবুও তোমার আলো
হৃদয় আমার কেড়ে নিলে
কেন আমার আকাশে এলে...'
কিন্তু এতো কিছুর পরেও বালিকার মনে কিসের যেন অভাব বিরাজ করে। সে থেকে থেকে বিষন্ন বোধ করে। বালকের আকাশে সে অনাহুত অতিথির মতো এলেও এখন সেই এই আকাশের মালিক। সে আক্ষরিক অর্থে বালকেরও সমগ্র সত্তার অধিকারিনী। বালক যেচেই তাকে সব দিয়ে দিয়েছে।
সেও বালককে সব কিছু দিয়ে দিতে চায়। তবে বালক কখনো তাকে জোর করেনা। ইচ্ছে করলে সে বালিকার দুর্বল মুহুর্তের সুযোগ নিতে পারে। এমন মুহুর্তও এসেছে বহুবার। তবে সত্যিকারের ভালোবাসায় কোনো কামনা থাকেনা... কেড়ে নেবার কিছুই যে নেই সেখানে।
বালক অপেক্ষা করে।
দিনে... সোনালী বিকেলগুলোয়... চাঁদনী রাতের মায়াবী প্রহরে... ঊষার স্নিগ্ধ লিলুয়া বাতাসে!
কিন্তু বালিকার হৃদয়ে অন্য কোনো জগতের বাঁশরির সুরের অজানা আকর্ষন! সে থেকে থেকে এলোমেলো হয়ে যায়।
দিন পেরিয়ে বিকেল-রাত-ভোর... পায়ে পায়ে অমুল্য সময়ের পদস্খলন... কিন্তু তাকে আর বালকের পাওয়া হয়ে উঠে না। চির-পরিচিত আকাশ তার নীলাভ রুপ হারায়। বালক ধীরে ধীরে আরো মায়ায় পড়ে যায়। কিন্তু সে সীমা অতিক্রম করেনা। বালিকা তার মনের ভিতরেই থেকে যায়।
একদিন বালিকা আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করে, বালকের আকাশ তার কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছে! আরো বড় কোনো ঊড়ার যায়গার তার খুব প্রয়োজন। অথচ সে এটা বেমালুম বিস্মৃত হয়, তার কোন আকাশ ছিল না... ছিলনা এমন কেউ যে তার ব্যাথাকে নিজের হৃদয়ে অনুভব করে তার মনকে- মনের অসুখকে সারিয়ে তার জগতটিকে রঙে রঙে রঙিন করে দেয়। একজন বালক তার নীল হৃদয়কে ঠিক করতে গিয়ে নিজেই যে নিজের হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে, দেখেও না দেখার ভান করে।
বালিকা মুক্তি পেতে চায় এই স্বল্প পরিসরের করিডোর থেকে।
রায়হান ঘরে প্রবেশ করে।
রুমা টের পায়না। সে তখন জীবনযুদ্ধের বাস্তব ময়দান থেকে বহুদূরে এক মেঘবালিকা হয়ে মুক্তির চিন্তায় ব্যকুল।
কিন্তু মুক্তি কি এতো সহজে আসে?
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৯১২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
গল্পটির প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আপনার ভালো লাগা জেনে আনন্দিত হলাম। আরো একটি নতুন প্লট মাথায় এসেছে। ইনশা আল্লাহ এটি শেষ করেই লিখায় নেমে পড়ব।
বারাকাল্লাহু ফীহ।
পরম নির্ভয়ে কারো উপর গভীর বিশ্বাস করে চরম প্রশান্তির ছোয়া মিলে যেন!কিন্তু সেই বিশ্বাস ভেংগে গেলে সবার উপরই অবিশ্বাসের ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় অজান্তেই!
তবে কেন মানুষ বিশ্বাস নিয়ে খেলে যায় বারে বার!!!
মানুষ কেন বিশ্বাস নিকে খেলা করে আমার জানা নেই। তবে এরপরও মানুষ হবার কারনে বিশ্বাসকে হৃদয়ে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হবে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন